একটা নারী বোঝে কিন্তু পুরুষ কবে বুঝবে Ēkṭā nārī bōjhē kintu puruṣ kabē bujhbē
একটা নারী বোঝে কিন্তু পুরুষ কবে বুঝবে Ēkṭā nārī bōjhē kintu puruṣ kabē bujhbē
একটা মেয়ে, সেই মেয়েটাকে যখন বিয়ের আগে ছিপছিপে দেহ আর মসৃণ ও উজ্জ্বল ত্বক দেখে বিয়ে করেছিলেন!! কত স্বপ্ন, তাকে মনে হয়েছিল রাজকন্যা!
সেই রাজকন্যাকে পেলে আপনি গোটা রাজত্বই যেন জয় করে নেবেন।।
অথচ বিয়ের ৫-৬ বছর পর, আপনি আপনার স্ত্রীর দিকে তাকালেন–কি দেখতে পাবেন?
ছিমছিমে দেহের জায়গায় চর্বিযুক্ত একটা আনফিট দেহ, মসৃণ উজ্জ্বল ত্বকের জায়গায় খসখসে আর বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া একটা মুখ, চঞ্চলতায় প্রাণবন্ত মানুষটার জায়গায় চিন্তাগ্রস্থ আর ব্যতিব্যস্ত এক নারী!!
অধিকাংশ পুরুষের তখন আর নিজের স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ কাজ করে না। তাকে তখন আর রাজকন্যা বা রাণী বলে মনে হয় না, তখন তাকে কথায় কথায়
"দুই বাচ্চার মা" বলে সম্মোধন করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।।
এই যে পরিবর্তন, একটি পুরুষের মনে বিরূপ প্রভাব পড়া এটার কারণ কখনো ব্যাখ্যা করা হয়েছে? কখনো পুরুষ এই কারণটা খুঁজে দেখেছে? কিংবা অনুসন্ধান করেছে এই পরিবর্তনের পেছনে দায়ী কে বা কারা?
একটা মেয়ে ২০,২২ কিংবা ২৫,২৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাবা-মার কাছে থাকার পর, যাকে দেখে আপনার রাজকন্যার মতো মনে হয়েছিল, চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল। মাত্র ৫-৬ বছরের সংসার করে সেই মেয়েটা কেন আপনার চোখে " বাচ্চার মা " হিসেবে ছোট হবে?
কেন সে আপনার কাছে বাবার রাজকন্যা থেকে আপনার সংসারের রানী হতে পারল না?
সমস্যাটা তাহলে কি আপনার কিংবা আপনাদের।।
যে মেয়েকে তার বাবা-মা , ভাই-বোন 'রাজকন্যা' হিসেবে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিল, সেই মেয়েকে আপনি এই পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়েছেন। আপনি পারেন নি হয়তো তার যত্ন নিতে, আপনি হয়তো কখনো খোঁজ নেন নি ।
বাসন মাজতে গিয়ে তার হাতটা আস্তে আস্তে খসখসে হয়ে গেছে। কখনো সে হাতে সামান্য মেরিল লাগিয়ে দিয়েছিলেন? আপনার সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য নয় মাস পেটে ধারণ করে সেই ছিমছিমে দেহটা চর্বিযুক্ত হয়ে গেল, তাকে নিয়ে কখনও হাঁটতে বের হয়েছিলেন?
আপনি ঘুমিয়েছেন, আপনার সেই রাজকন্যা আপনার পরিবার এবং সন্তানের দেখাশোনার জন্য ঠিকমতো ঘুমাতে পারে নি। কখনো সেই মসৃণ ত্বকের যত্ন নেয়া হয়ে ওঠে নি। ঘুমানোর সময় একটু সময় নিয়ে তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন?
তার উসকো খুসকো চুলে জট লেগে যেত, সে জট খোলার সময় সে পায় নি আপনার পরিবার আর সন্তানের পেছনে সময় ব্যয় করে। আপনি পাশে বসে আঁচড়ে দিতেন কখনো?
এরপরেও পুরুষের মনে আসে তার স্ত্রী আগের মত আকর্ষনীয় নেই। তার খানিকটা বিরক্তি লাগে। কখনো হয়তো কোনো ষোড়শী মেয়েকে দেখে আফসোসও জেগে ওঠে! অতঃপর কেউ কেউ অন্য কারো দিকে ঝুঁকে পড়ে!
আপনার জন্য যে নারী তার সমস্ত সৌন্দর্য কোরবানি করে দিয়েছে, আপনি যে নারীকে বাবা মায়ের আদরের কোল থেকে নিয়ে এসে অযত্নে অবহেলায় এই অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছেন, সেই নারী কিংবা তার বাবা-মা যদি আপনার দিকে আঙ্গুল তুলে কি জবাব দিবেন??
কতজন নারীকে দেখেছেন তার স্বামীর বয়স্ক চেহারার দিকে তাকিয়ে অভক্তি দেখিয়েছে?
২৬ বছরের সুপুরুষ লোক যাকে বিয়ে করেছিল কোনো নারী। সারাদিন বাইরে রোদে কাজ করার পর সেই তেলতেলে চেহারা, ঘন কালো চুল-দাড়ি, সুঠাম দেহ আর পেশীবহুল শরীর কি থাকে??
থাকে না। পুরুষের চেহারাতেও বয়সের ছাপ পড়ে, চুলে পাক ধরে, সারাদিন কাজের পর তার গায়েও ঘামের দুর্গন্ধ আসে!
একজন স্ত্রী, সে বোন আর মায়ের মমতার জায়গাটাও তার স্বামীকে দেয়। বয়সের ছাপ পড়ে কাঁচা-পাকা চুলের লোকটার দিকে তাকিয়েও, তার কখনও অভক্তি আসে না। বড্ড ভালোবাসা আসে তার প্রতি, ভালো খাবারগুলো না খেয়ে তার জন্য রেখে দেয়। বাসায় আসলে তার পিছন পিছন লেগে থাকে কখন তার কি লাগে!
ছেলেমেয়েকে শাসন করে বলে তোদের বাবা তোদের জন্য কত কষ্ট করে, শরীরটা কেমন পড়ে গেছে। মানুষটাকে যন্ত্রণা দিস না তো। ঘুমন্ত বয়স্ক মানুষটির যেন ঘুম না ভাঙ্গে, তাই পা টিপে টিপে কাজ করে যায়। বাচ্চাদের চুপ করিয়ে রাখে। স্বামীর মলিন, ভগ্ন চেহারা দেখে স্ত্রীর চোখে ভালোবাসার জন্ম নেয়।
অকৃত্রিম ভালোবাসা...
একটা নারী বোঝে ভগ্নচূর্ণ এই পুরুষ, সে তো তার জন্যই ভেঙ্গেছে! তার জন্যই লড়াই করে শরীরের সুখ বিসর্জন দিয়েছে। সে নারী ভালোবাসে, আরও ভালো
ভাবে, আরও মমতায়।
পুরুষ কবে বুঝবে নারীর ভগ্নদশাও তারই জন্য, তারই জন্যে উৎসর্গ! তারা কেন পারে না, সেই ভগ্নচূর্ণ মানুষটাকে একইভাবে ভালোবাসতে???
যেদিন তারা বুঝবে স্ত্রী বোঝা নয় বরং আমানত, হয়তো সেদিন তাদেরও একই অনুভূতি হবে! হয়তো সেদিন একই ভাবে দু'জন মানুষ দু'জনের প্রতি কৃতজ্ঞতায়
বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবে অনায়াসে।
No comments:
Post a Comment
Please do not any spam in the comments Box